অধিকারী সৌমেন্দু | 7,63,195 | BJPWON |
প্রার্থী নাম | ভোট | রেজাল্ট |
---|---|---|
অর্জুন কুমার মাইতি | 544 | INDLOST |
বিদেশ বসু মাইতি | 5,654 | INDLOST |
মাখন লাল মহাপাত্র | 1,804 | BSPLOST |
মানস প্রধান | 2,529 | SUCI(C)LOST |
মহম্মদ আহমাদুল্লাহ খান | 586 | INDLOST |
NOTA | 8,134 | NOTALOST |
ঊর্বশী বন্দ্যোপাধ্যায় | 31,122 | CONGLOST |
উত্তম বারিক এস/ও প্রয়াত বীরেন্দ্র বারিক | 7,15,431 | TMCLOST |
উত্তম বারিক এস/ও প্রয়াত নারায়ণ বারিক | 1,998 | INDLOST |
রাজ্য রাজনীতির বর্তমান চিত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক জেলা পূর্ব মেদিনীপুর। কারণ এই জেলাতেই ঘটে গিয়েছিল নন্দীগ্রাম আন্দোলন, যা ৩৪ বছরের বাম সরকারকে সরিয়ে তৃণমূলের ক্ষমতায় আসার পথকে অনেকটাই প্রশস্ত করেছিল। আবার সেই পূর্ব মেদিনীপুর জেলারই একটি লোকসভা কেন্দ্র তথা অন্যতম প্রধান শহর কন্টাই বা কাঁথি, যা মাঝেমধ্যেই উঠে আসে খবরের শিরোনামে। কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত বিধানসভা কেন্দ্রগুলি হল, চণ্ডীপুর, পটাশপুর, কাঁথি উত্তর, ভগবানপুর, খেজুরি, কাঁথি দক্ষিণ ও রামনগর। ইতিহাস অনুসারে, পঞ্চম শতাব্দীতে ফা-হিয়েন যখন ভারতে সফর করছিলেন, সেই সময় এই জায়গা ছিল প্রায় পুরোটাই জনবসতিহীন ছিল। বাইরের মানুষ এই জায়গার নাম পর্যন্ত জানত না।
কাঁথি মূলত হিন্দু রাজা গোপীনাথ পট্টনায়েক দ্বারা শাসিত উড়িষ্যার একটি শাখা রাজ্য হিজলি কিংডমের অংশ ছিল। ১৮৫২ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কন্টাইকে ৬টি থানা সমন্বিত একটি উপবিভাগ হিসাবে ঘোষণা করে। সেই ৬টি থানা ছিল কন্টাই, খেজুরি, রামনগর, ভগবানপুর, এগরা এবং পটাশপুর। স্বাধীনতা সংগ্রামেও বিশেষ ভূমিকা ছিল কাঁথির। অসহযোগ আন্দোলনের সময় জেলায় মোট ১২টি জাতীয় বিদ্যালয় গড়ে উঠেছিল। তার মধ্যে কেবল কাঁথি মহকুমাতেই স্থাপিত হয়েছিল ৯টি। আবার দ্বিতীয় আইন অমান্য আন্দোলনের সময়ও কাঁথির অবদান অনস্বীকার্য। তবে ব্রিটিশরা দেশ থেকে বিদায় নিলেও সেই রাজনৈতিক আন্দোলনের ধারা আজও জারি রয়েছে।
রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী যেমন এই কাঁথিরই মানুষ, তেমনই তাঁর বাবা শিশির অধিকারও এলাকার সাংসদ। ২০০৯ সাল থেকে লাগাতার ৩ বার সাংসদ হয়েছেন তিনি। দীর্ঘ ৩৪ বছর ধরে এই রাজ্যে বাম সরকার ছিল। আর সেই বাম বিরোধিতার মধ্যে দিয়েই নিজের রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন শিশির অধিকারী। সেই সময় অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার কাঁথি মহকুমার প্রভাবশালী কংগ্রেস নেতা ছিলেন শিশির। সাতের দশকে কাঁথি পুরসভার চেয়ারম্যান হন তিনি। ১৯৮২ সালে প্রথমবার দক্ষিণ কাঁথির বিধায়ক হন শিশির অধিকারী। কিন্তু ১৯৮৭ সালে তাঁকে আর টিকিট দেয়নি দল। বরং ওই কেন্দ্রে তৎকালীন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি ওই কেন্দ্র থেকে নিজের মনোনিত অনুগামীকে দাঁড় করান। সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন শিশির অধিকারী। একইসঙ্গে নিজে নির্দল হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হন। কারও কারও মতে বাবার সেই বিদ্রোহী স্বভাবই পেয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। পরবর্তী সময়ে ছেলে শুভেন্দু নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন শিশির অধিকারী। তৃণমূলের টিকিটে ২ বার বিধায়ক হয়েছেন তিনি। এমনকী ২০০৯ থেকে কাঁথির সাংসদও শিশির। রাজ্যে তৃণমূলের সরকার আসার পর থেকে ২০২০ সালের শেষদিক পর্যন্ত কাঁথিতে রাজনৈতিক ডামাডোল সেভাবে চোখে পড়েনি। কিন্তু শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরেই কাঁথি-সহ গোটা পূর্ব মেদিনীপুরে রাজনৈতিক চিত্রটা বদলাকে শুরু করে। শুভেন্দুর পিছন পিছন তাঁর ভাই সৌমেন্দু অধিকারীও যান বিজেপিতে। আর তার ঠিক কয়েকদিন পরেই অমিত শাহর মঞ্চে দেখা যায় শিশির অধিকারীকে। যার জেরে তোলপাড় পড়ে যায় কাঁথি-সহ গোটা বাংলার রাজনীতিতে। শিশিরের সাংসদ পদ খারিজের দাবি জানায় তৃণমূল, যা নিয়ে বিস্তর জলঘোলাও হয়।
আবার কখনও রাষ্ট্রপতি-উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোটদান পর্ব, তো কখনও আবার সাংসদের সম্পত্তির পরিমাণ-সহ, বিভিন্ন ইস্যুতে বারেবারেই উত্তাপ ছড়িয়েছে কাঁথির রাজনীতিতে। এদিকে আবার শিশির অধিকারীকে 'গুরুদেব' বলে সম্মোধন করে প্রণাম করার জেরে বিপাকে পড়েছেন কাঁথির পুরপ্রধান সুবল মান্না। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানমঞ্চে উঠে সটান শিশির অধিকারীকে প্রণাম ঠুকে দেন সুবল। আর তাতেই গোল বাধে। সুবলের আচরণ ভালো চোখে নেয়নি তাঁক দল। যার জেরে তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপেও করা হয়। এই ঘটনাতেও চাঞ্চল্য ছড়ায় কাঁথির রাজনৈতিকমহলে, যার আঁচ ছড়িয়ে পড়েছে জেলার গণ্ডি ছাড়িয়ে গোটা রাজ্যে। প্রসঙ্গত, দীর্ঘিদন ধরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শিশির অধিকারীর মধ্যে দেখা গিয়েছে দাদা-বোনের সম্পর্ক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন শিশির অধিকারীর কাছে 'বোন'। আর মমতার কাছে তিনি 'শিশির দা'। তবে অধিকারী পরিবারে পদ্ম ফোটার পর থেকে সেই সম্পর্কে চলে আসে ভাঙন, যা এখনও একইরকম। এছাড়া শিশিরের ছেলে শুভেন্দু অধিকারীও রাজ্যের বিরোধী দলনেতা হিসেবে লাগাতার আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছেন তৃণমূলকে। ফলত কাঁথির অধিকারী পরিবারের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস তথা রাজ্য সরকারের সম্পর্ক কার্যত এখন 'সাপে-নেউলে'।
তবে শুধু রাজনীতি নয়, পর্যটনের দিক থেকেও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এলাকা এই কাঁথি। কারণ রাজ্য়ের অন্যতম সমুদ্রকেন্দ্রিক পর্যটনস্থল দিঘা, মন্দারমণি বা তাজপুরের মতো জায়গাগুলি এই কাঁথি মহকুমাতেই অবস্থিত। যেহেতু দিঘা, মন্দারমণি বা তাজপুরের মতো বিচগুলি পর্যটকদের কাছে অন্যতম ডেস্টিনেশন, তাই এখানকার অর্থনীতির একটা বড় অংশও পর্যটন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। তাছাড়াও এখানে চাষাবাদ ও মাছ ধরেও প্রচুর মানুষ জীবিকা নির্বাহ করেন। যেহেতু দিঘা রাজ্যের অন্যতম পর্যটনক্ষেত্র, তাই এখানে পৌঁছনও খুব সহজ। হাওড়া এবং কলকাতা থেকে রেল ও সড়ক পথে অল্প সময়ের মধ্যেই পৌঁছে যাওয়া যায় দিঘা। এছাড়াও রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সরকারি-বেসরকারি বাসে দিঘা ও মন্দারমণিতে পৌঁছন যায়। এখানেই শেষ নয়, কাঁথির সঙ্গে সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের যোগও রয়েছে। কাঁথির দেশপ্রাণ ব্লকের দরিয়াপুর গ্রামে রয়েছে একটি প্রাচীন কালী মন্দির, যা কপালকুণ্ডলা মন্দির নামে খ্যাত। রসুলপুর নদীর মোহনায় দরিয়াপুরের এই কপালকুণ্ডলা মন্দিরের উল্লেখ পাওয়া যায় বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'কপালকুণ্ডলা' উপন্যাসে। এখন দেখার আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে নতুন কোনও উপন্যাস রচিত হয় কি না এই কাঁথির বুকে।
বীরভূম | কলকাতা দক্ষিণ | বনগাঁ | ব্যারাকপুর | দমদম | বারাসাত | বসিরহাট | কলকাতা উত্তর | হাওড়া | উলুবেরিয়া | শ্রীরামপুর | হুগলি | আরামবাগ | তমলুক | ঘাটাল | মেদিনীপুর | দার্জিলিং | বাঁকুড়া | রায়গঞ্জ | বিষ্ণুপুর | বালুরঘাট | মালদহ উত্তর | বর্ধমান দুর্গাপুর | আলিপুরদুয়ার | জলপাইগুড়ি | জঙ্গিপুর | মুর্শিদাবাদ | রানাঘাট | জয়নগর | মথুরাপুর | ঝাড়গ্রাম | পুরুলিয়া | বর্ধমান পূর্ব | ডায়মন্ড হারবার | যাদবপুর | বহরমপুর | কৃষ্ণনগর | মালদহ দক্ষিণ | বোলপুর | আসানসোল