www.fgks.org   »   [go: up one dir, main page]

বিষয়বস্তুতে চলুন

ধীরেন্দ্রনাথ বেরা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ধীরেন্দ্রনাথ বেরা
জন্ম(১৯০৫-০৭-০৫)৫ জুলাই ১৯০৫
চড়াশ্যামদাস বিদ্যানগর, বিষ্ণুপুর, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, পশ্চিমবঙ্গ ভারত
মৃত্যু১২ মার্চ ১৯৮৭(1987-03-12) (বয়স ৮১)
পেশাপ্রকাশক ও লেখক
দাম্পত্য সঙ্গীঊষারাণী দেবী
পিতা-মাতাঅমরচরণ বেরা (পিতা)
লিচুবালা দেবী (মাতা)

ধীরেন্দ্রনাথ বেরা (৫ জুলাই ১৯০৫ - ১২ মার্চ ১৯৮৭) ছিলেন একজন দূরদর্শী শিক্ষাব্রতী ও সমাজসেবক। শিক্ষক, প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি সংগঠক ও পাঠ্যপুস্তক প্রকাশক হিসাবে পরিচিত ছিলেন দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার বিদ্যানগরের এই প্রাণপুরুষ তথা রূপকার। [১][২]

জন্ম ও শিক্ষা জীবন

[সম্পাদনা]

ধীরেন্দ্রনাথ বেরার জন্ম ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ৫ জুলাই ব্রিটিশ ভারতের অবিভক্ত চব্বিশ পরগনা জেলার অধুনা দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার চড়াশ্যামদাস গ্রামের এক নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে। পিতা অমরচরণ বেরা ও মাতা লিচুবালা দেবীর কনিষ্ঠ পুত্র ছিলেন ধীরেন্দ্রনাথ। তার বিদ্যালয়ের পাঠ গ্রাম হতে দশ কিলোমিটার দূরবর্তী বাওয়ালী মণ্ডল জমিদারদের স্কুলে (বর্তমানে বাওয়ালি হাই স্কুলে)। ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্ট্রান্স পরীক্ষা উত্তীর্ণ হন। ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দের তার পিতা গ্রামে প্রাইমারী স্কুল প্রতিষ্ঠা করলে তিনি শিক্ষক হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন এবং পাশাপাশি তিনি তৎকালীন যাদবপুর জাতীয় শিক্ষা পর্ষদ অধুনা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় হতে G T Training নেন। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে প্রশিক্ষণ শেষের পর ১৯৩০ প্রাইমারী বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। কিন্তু ধীরেন্দ্রনাথের ইচ্ছা ছিল তিনি তার পিতাকে অনুসরণ করে শিক্ষার প্রসারে নিজের গ্রামে ও সন্নিহিত অঞ্চলে স্কুল কলেজ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করবেন এবং স্থানীয় যুব সম্প্রদায়ের সামগ্রিক বিকাশে ব্রতী হবেন। [১]

কর্মজীবন

[সম্পাদনা]

ধীরেন্দ্রনাথ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। শেষের দিকে তিনি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সম্পাদক নিযুক্ত হন। পাশাপাশি প্রথমে মৌখালি ইউনিয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান ও পরে বোর্ড বিভাজিত হলে কাঙ্গনবেড়িয়া বোর্ডের চেয়ারম্যান হন এবং সত্তরের দশকের শেষ পর্যন্ত ওই পদে আসীন ছিলেন তিনি। বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদ হতে অব্যবহিত নিয়ে তিনি পুস্তক প্রকাশনার কাজে লিপ্ত হন। কলকাতার ৬/৩, রমানাথ মজুমদার স্ট্রীটে 'টিচার্স বুক স্টল' নামক প্রকাশনা সংস্থা গঠন করেন এবং বিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তক প্রকাশ শুরু করেন। তিনি নিজেও বেশ কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেন। ধীরেন্দ্রনাথ তার প্রকাশনা ব্যবসা হতে উদ্বৃত্ত অর্থ শিক্ষা বিস্তার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণে ব্যয় করতে শুরু করেন। শিক্ষক সমিতি ও ভারতের শিক্ষা আন্দোলনে যুক্ত থাকার সুবাদে তিনি তৎকালীন শিক্ষা অধিকর্তা এস কে ঘোষ, অবিভক্ত চব্বিশ পরগনা জেলার জেলাশাসক বি আর গুপ্তা, ভারত সভা তথা ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক হরেন্দ্রনাথ মজুমদার প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও শিক্ষাবিদের সঙ্গে পরিচিত হন। ধীরেন্দ্রনাথ বিশেষ সহায়তা পান হরেন্দ্রনাথ মজুমদারের কাছ থেকে। তার পরিকল্পনার ফলশ্রুতিই সার্থক হয় ধীরেন্দ্রনাথের স্বপ্ন। ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে বিদ্যানগর শিক্ষা সংসদ প্রতিষ্ঠা ও পরবর্তী এক দশকের মধ্যে একগুচ্ছ স্কুল, কলেজ ও লাইব্রেরি ইত্যাদির প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়। বিদ্যানগরের বিস্তৃত শিক্ষাপ্রাঙ্গণে টেকনিক্যাল স্কুল, ওম্যান্স ওয়ার্ক সেন্টারসহ স্টুডেন্টস হস্টেলের ব্যবস্থা ইত্যাদিও সম্পন্ন করেন। তার সর্বশেষ কাজ ছিল বিদ্যানগর কলেজ প্রতিষ্ঠা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন সহ-উপাচার্য ড. পি কে বসুর স্বল্প কার্যকালীন সময়ে সত্ত্বর কলেজ প্রতিষ্ঠা অনুমোদন পাওয়ার জন্য ধীরেন্দ্রনাথকে তার কলকাতায় বাড়ি কেনার জন্য সঞ্চিত অর্থ কলেজের জন্য ব্যয় করতে হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় নিজের জমি, নিজের জমি অন্যের জমির সঙ্গে বদল করে নতুবা কিনে দান ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে পরিচালন ব্যয়ও বহন করতে হয়েছে তাকে। জেলা গ্রন্থাগারের জমির কিছু অংশ বাখরাহাটের স্বর্ণব্যবসায়ী পাঁচকড়ি দত্ত এবং বাকিটা তার স্ত্রী ঊষারাণী দেবীর। সবকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক ছিলেন তিনি। প্রকাশনা ব্যবসায় থাকাকালীন ধীরেন্দ্রনাথ ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দ হতে প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তক রচনা এবং বয়স্ক শিক্ষার্থীদের জন্য বই প্রণয়নের ভাবনা বাস্তবায়িত করেন।

রচিত পাঠ্যপুস্তক

[সম্পাদনা]
  • প্রাথমিক স্বাস্থ্য ও সমাজ শিক্ষা (১ম ভাগ) (১৯৬৪)
  • পঞ্চায়েত রাজ (বয়স্ক শিক্ষার্থীদের জন্য) (১৯৬৯)
  • মণিমালিকা (১ ম ভাগ) (১৯৮৫)
  • চিলড্রেনস স্পেলিং বুক (১৯৮৫)
  • প্রাথমিক বাংলা ব্যাকরণ রচনা (১৯৮৮)
  • চাইল্ডস' ইংলিশ গ্রামার (১৯৮৫)
  • চাইল্ডস ইংলিশ ট্রানশ্লেসন (১৯৮৫)
  • ভারতের সংগ্রাম (১৯৮৫) (গজেন্দ্র নাথ মিত্রের সঙ্গে যৌথভাবে) [১]

সম্মাননা

[সম্পাদনা]

বয়স্ক শিক্ষার্থী ও নবস্বাক্ষরদের জন্য ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে রচিত পঞ্চায়েত রাজ গ্রন্থটির জন্য ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ১৫ সেপ্টেম্বর তিনি ভারত সরকারের পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে বেঙ্গল পাবলিশার্স অ্যাসোসিয়েশন বিশেষ সম্মাননা প্রদান করে। [১]

পারিবারিক জীবন ও জীবনাবসান

[সম্পাদনা]

ধীরেন্দ্রনাথ ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে ঊষারাণীকে বিবাহ করেন। তাদের সাত সন্তানের মধ্যে পাঁচ পুত্রেরা হলেন বিজন, বিমল, কমল, শ্যামল ও নির্মল এবং দুই কন্যা আঙুর ও ঝর্ণা। ধীরেন্দ্রনাথ বেরা ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দের ১২ মার্চ বৃহস্পতিবার সকালে তার কলকাতার বাসভবনে পরলোক গমন করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮১ বৎসর।

উত্তরাধিকার

[সম্পাদনা]

ধীরেন্দ্রনাথ বেরার মৃত্যুর পর তার প্রতিষ্ঠিত বিদ্যানগর কলেজ তাদের সূবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের সময় ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে ধীরেন্দ্রনাথ বেরা স্মৃতি বক্তৃতা মালার আয়োজন করে। বক্তৃতামালার সংকলন বিবেকানন্দ সাউ ও সুব্রত সর এর সম্পাদনায় পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয়েছে।[৩]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. 'ময়ূখ' (ত্রৈমাসিক পত্রিকা)। জেলা গ্রন্থাগার, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা, বিদ্যানগর শিক্ষা সংসদ সৌজন্যে প্রকাশিত। ২৫ জুন ২০০৫। 
  2. "ধীরেন্দ্রনাথ বেরা মেমোরিয়াল লেকচার্স"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০১-১৭ 
  3. সাউ, বিবেকানন্দ; সর, সুব্রত। Dhirendranath Bera Memorial Lectures। মহাবোধি বুক এজেন্সি, কলকাতা। আইএসবিএন 978-93-8472-131-2