নৃপেন্দ্র নারায়ণ
নৃপেন্দ্র নারায়ণ (৪ই অক্টোবর ১৮৬২ - ১৮ই সেপ্টেম্বর, ১৯১১) ভারতের কোচবিহারের রাজতান্ত্রিক রাজ্যের ১৮৬৩ থেকে ১৯১১ সাল পর্যন্ত মহারাজা ছিলেন। [১][২]
প্রারম্ভিক জীবন
নৃপেন্দ্র নারায়ণ যখন দশ মাস বয়স ছিলো তখন তার পিতা নরেন্দ্র নারায়ণ ১৮৬৩ সালে মারা যান। তিনি একই বছরেই রাজা হিসেবে রাজতন্ত্র পালন করেছিলেন। যেহেতু তিনি শিশু ছিলেন সেহেতু প্রশাসন ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেল নিযুক্ত করে কমিশনারের কাছে হস্তান্তর করেন।[৩] তাঁর বড় ভাই চিত্ররঞ্জন এবং রুপনারায়ণপুরের রাজা, তাদের পূর্বপুরুষদের জমি ছিলো।[৩] তিনি বেনারসে ওয়ার্ডস ইন্সটিটিউট এ অধ্যয়ন করেন, তারপরে বাঁকিপুর কলেজ, পাটনা এবং শেষপর্যন্ত কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে, আইন নিয়ে অধ্যয়ন করেন। ১৮৭৮ সালে তিনি কলকাতার কেশবচন্দ্র সেনের কন্যা সুনিতী দেবীকে বিয়ে করেন। অবিলম্বে বিয়ের পর তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য ইংল্যান্ডে চলে যান।[৩]
পরিবার
তিনি চার পুত্র ও তিন কন্যার পিতা ছিলেন নামগুলি হল- রাজেন্দ্র নারায়ণ, জিতেন্দ্র নারায়ণ, ভিক্টর নৃত্যেন্দ্র নারায়ণ, হিতেন্দ্র নারায়ণ এবং কন্যা প্রতিভা দেবী, সুধীরা দেবী এবং সুকৃতি দেবী।[৪][৫] পরে তাঁর পুত্র রাজেন্দ্র নারায়ণ ও জিতেন্দ্র নারায়ণ পরে কুচবিহারের মহারাজা হন। গায়ত্রী দেবী ও ইলা দেবী তাঁর পুত্র জিতেন্দ্র নারায়ণের মেয়ে।
মৃত্যু
নৃপেন্দ্র নারায়ণ ১৯১১ সালের সেপ্টেম্বরে ইংরেজ উপকূলীয়বর্তী অঞ্চল বেক্সহিল্ল সাগরে মৃত্যু হয়। তাঁর শেষ কৃত্যকার্য ২১শে সেপ্টেম্বর, ১৯১১ বেক্সহিল্ল এ সম্পন্ন হয়। মহারাজা বেক্সহিল্ল এসেছিলেন আরোগ্য লাভ করার জন্য পরে মুর হল, নিনফিল্ড ছেড়ে চলে যায়। তার এক মেয়ে সম্প্রতি নিমজ্জিত হয়ে ছিল। ১৮ই সেপ্টেম্বর ১৯১৩ সালে তাঁর দ্বিতীয় পুত্র মহারাজা কুমার জিতেন্দ্র দ্বারা নৃপেন্দ্রর নামে উত্সর্গীকৃত একটি স্মারক পানীয় শাখা খোলা হয় (জিতেন্দ্র এর বড় ভাই রাজেন্দ্রের মৃত্যুর পর কোচ বিহারের সিংহাসনে বসেন)। ডে লা ওয়ার প্যাভিলিয়নের বর্তমান অবস্থানে ফোয়ারাটি মূলত কোস্টগার্ডদের কুঠিরের পাশে ছিল। ১৯৩৪ সালে যখন প্যাভিলিয়নের পথ তৈরির জন্য কুঠিরটি ধ্বংস করা হয়, তখন ইগার্টন পার্কের দুর্গটি পুনরায় তৈরি হয়। এটি বেক্সহিল্ল জাদুঘর থেকে পাশের পার্কের প্রবেশের কাছে দাঁড়িয়ে ছিল ১৯৬৩ সালে এটি পুনঃস্থাপন জন্য অপসারিত করা হয়। এটি এক সময়ের জন্য বেক্সহিল্ল সমাধিটিকে সংরক্ষণ করা হয়েছিল কিন্তু তারপর পরে অদৃশ্য হয়ে যায়। তার বর্তমান অবস্থান অজানা।[৬]
বেক্সহিল্ল সাগরের ঐতিহাসিক সমাজ বেক্সহিল্লের সাথে নৃপেন্দ্রর সংযোগ সংক্ষিপ্ত বিবরণ "বেক্সহিল্ল মহারাজা" একটি বই প্রকাশ করে ছিল।
কর্মজীবন
তিনি ১৮৮৪ সালে একটি আইন প্রবর্তন করেন তাঁর রাজ্যে ক্রীতদাস প্রথা নিষিদ্ধ করেছিলেন। ১৮৮৮ সালে তিনি তাঁর নিজের রাজ্যে উচ্চতর শিক্ষার উন্নয়নের জন্য ভিক্টোরিয়া কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন যা বর্তমানে এ.বি.এন.সীল কলেজ নামে পরিচিত। এছাড়াও, তাঁর রানী, সুনিতী দেবীর নামে, একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন যা সুনিতী কলেজ নামে নামকরণ করা হয় পরে ১৮৮১ সালে সুনিতী একাডেমী নামে পরিচিত।১৮৮৩ সালে তিনি জলপাইগুড়ি শহরে নৃপেন্দ্র নারায়ণ হল নির্মাণ করেন এবং ১৮৮৭ সালে দার্জিলিংয়ে লেইস জুবিলি স্যানিটিয়ারিয়াম নির্মাণের জন্য জমি প্রদান করেন।[৪] তিনি ১৮৮২ সালে কলকাতায় ইন্ডিয়া ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন।[৭] তিনি ১৮৮৯ সালে কোচবিহারে দরিদ্রদের জন্য বিনামূল্যে খাবার বিতরণের জন্য আনন্দময়ী ধর্মসালা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ১৮৯২ সালে কোচবিহারে নৃপেন্দ্র নারায়ণ পার্ক বোটানিক্যাল গার্ডেন প্রতিষ্ঠিত করেন।[৮] তিনি ১৯০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত কলকাতা ক্লাবের প্রথম সভাপতি ছিলেন।
মহারাজা ছিলেন ক্রিকেটে একজন উদ্যমশীল ব্যক্তি এবং কোচবিহার দলকে উন্নতি করেন এবং সারা পৃথিবীর শীর্ষ মানের খেলোয়াড়দের আমন্ত্রণ জানায়। কোচবিহারের প্রাসাদে তিনি একটি ক্রিকেট মাঠ স্থাপন করেন এবং কলকাতার আলিপুরে একটি মাঠ উন্নতি করেন। তাঁর দল এবং নাটোর মহারাজার দল বাংলায় ক্রিকেটে প্রতিপক্ষ ছিল।[৯]
শিরোনাম এবং শৈলী
শিরোনাম
১৮৮৭ - কুইন ভিক্টোরিয়া জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে তিনি ভারতের সাম্রাজ্যের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য আদেশ গ্র্যান্ড কমান্ডার।
শৈলী
লেফটেন্যান্ট-কর্নেল তাঁর রাজরাজাদের মর্যাদাসূচক আখ্যাবিশেষ মহারাজা স্যার নৃপেন্দ্র নারায়ণ ভূপ বাহাদুর, জিসিআইই, সিবি
সন্মাননা
- ভারতের সম্রাট পদক স্বর্ন-১৮৭৭ তলোয়ারের সাথে
- নাইট গ্র্যান্ড কমান্ডার অব অর্ডার অফ দ্য ইন্ডিয়ান এম্পায়ার (জিসিআইই) -১৮৮৭
- রানী ভিক্টোরিয়া স্বর্ণজয়ন্তী পদক -১৮৮৭[১০]
- রানী ভিক্টোরিয়া ডায়মন্ড জুবিলি মেডেল আলিঙ্গন -১৮৯৭
- দিল্লী দরবার স্বর্ণপদক -১৯০৩
স্মৃতি
নৃপেন্দ্র নারায়ণ মেমোরিয়াল হাই স্কুল তার নামকরণ করা হয়,যা তাঁর পুত্র মহারাজা জিতেন্দ্র নারায়ণ ১৯১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত করেন।
| রাজনৈতিক দপ্তর | ||
|---|---|---|
| পূর্বসূরী মহারাজা নরেন্দ্র নারায়ণ ভূপ বাহাদুর |
মহারাজা কোচবিহার ১৮৬৩ - ১৯১১ |
উত্তরসূরী মহারাজা রাজেন্দ্র নারায়ণ ২ |
তথ্যসূত্র
- The Maharajah of Cooch Behar; Thirty-Seven Years of Big Game Shooting in Cooch Behar, the Duars, and Assam. Bombay, The Times Press, 1908.
টীকা
- ↑ Lord Curzon & The Indian States 1899–1905 By Ikram Ahmed Butt। ২০০৬। পৃষ্ঠা 333।
- ↑ COOCH BEHAR (Princely State), iinet.net.au
- ↑ ক খ গ Encyclopaedia Indica: India, Pakistan, Bangladesh: Volume 100 উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>ট্যাগ বৈধ নয়; আলাদা বিষয়বস্তুর সঙ্গে "b" নামটি একাধিক বার সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে - ↑ ক খ Royal History, Shri. Hemanta Kumar Rai Barma, CHAPTER 6, "Kochbiharer Itihas", 2nd edition (1988), National Informatics Centre, Cooch Behar District, http://coochbehar.nic.in
- ↑ Profile, Suniti Devi (Sen), (1864–1932), geni.com
- ↑ http://publicsculpturesofsussex.co.uk/object?id=156
- ↑ The Golden Book of India: A Genealogical and Biographical by Sir Roper Lethbridge – 2005 pp 269
- ↑ A Directory of Botanic Gardens and Parks in India by R. K. Chakraverty, D. P. Mukhopadhyay – 1990 – Page 31
- ↑ Mukherji, Raju। Eden Gardens Legend & Romance: Eden Gardens, the heritage cricket venue, celebrated 150 years (ইংরেজি ভাষায়)। Kolkatatoday.com। পৃষ্ঠা 31–34,173। সংগ্রহের তারিখ ১৬ এপ্রিল ২০১৭।
- ↑ Queen Victoria's Golden Jubilee